যৌবতী পেত্নীর মন ( 2য় পর্ব ) Bangla Golpo

যৌবতী পেত্নীর মন ( 2য় পর্ব ) Bangla Golpo

লেখাঃ নীল সাগর

প্রসব বেদনায় পেত্নী রেনু কাৎরাচ্ছে। তার কাতরানোর চিৎকারে যেন শাঁড়া গাছটা ভেঙ্গে পড়ছে। আশপাশ থেকে সব পেত্নীরা সান্ত্বনা দেয়ার জন্য চলে এসেছে, কেও মাথায় হাত বুলিয়ে সান্ত্বনা দিচ্ছে, কেও চুল টেনে দিচ্ছে, একজন বৃদ্ধা অনবরত বলে যাচ্ছে এই সময়ে কিভাবে নিজেকে তৈরি করতে হয়। এই চরম কষ্টের সময়েও রেনুর মুখে খুশির আভা।শুধু রেনু পেত্নী কেন অন্য সব পেত্নীরাও মিটিমিটি হাসছে, যেন বেশ খুশির একটা দিন আজ। শরীরের সব কয়টা হাড় একসাথে ভাংলে যে কষ্ট হয় রেনু পেত্নীর এখন তার চাইতে বেশি কষ্ট হচ্ছে। অসম্ভব ব্যাথা। নারী জাতি কেবল মাত্র মা হওয়ার জন্য কিভাবে এই বাথা সহ্য করে তা কোন ছেলেরা কোনোদিন বুঝবে না। যদি কোনোদিন সুযোগ আসতো তাহলে সৃষ্টি কর্তার কাছে এই প্রশ্ন করতাম, জানতে চাইতাম নিশ্চিত কষ্ট জেনেও পেটে বাচ্চা আসলে মেয়েরা কিভাবে এতো খুশিতে আত্মহারা হয়? নিশ্চিত ব্যাথার কথা জেনেও কিভাবে প্রতিবেশিরা এভাবে আদন্দিত হয়। রেনু আর তার চারপাশের পেত্নীদের খুশি দেখে মনে হচ্ছে এই আনন্দ খুবই পৈশাচিক, এই আনন্দের কোন ব্যাখ্যা হয়না। কি জানি হয়তো পৃথিবীতে মা হতে পারাটাই নারী জাতির জন্য সবচেয়ে বড় কোন বিষয়। হোক ষে পেত্নী জিন কিম্বা মানুষ।

লম্পট ফারুক মাস্টের আর তার ৫ জন বন্ধু দ্বারা গনঃ ধর্ষণের শিকার হয়ে রেনুর অকাল মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর পরে রেনুর পুঞ্জন্ম হয়েছে পেত্নী হিসাবে। আজগবি শোনালেও বাস্তবতা হল রেনু গর্ববতী। পেত্নী রেনুর গর্ভে ফারুক মাস্টের অথবা তার পাঁচ বন্ধুর যে কারো সন্তান। দেখতে দেখতে এই সন্তান পেটে নিয়ে রেনু নয় মাস পার করে এসেছে। বিগত নয় মাস ধরে রেনু একটা প্রশ্নের উত্তর খুজেছে কেন সেদিন রান্না করার জন্য সে ফারুক মাস্টারের বাসাতে গিয়েছিল? কিসের টানে? সে কি তাহলে ফারুক মাস্টের কে ভালবেসে ফেলেছিল? যেদিন সবাইকে লুকিয়ে ক্লাস রুমে লম্পট ফারুক মাস্টের তার হাত ধরে চাপ দিয়েছিল সেদিনই তো সে বুঝতে পেরেছিল এই হাতধরা ভালবাসার হাত ধরা ছিল না। যেদিন মাস্টের পড়াতে পড়াতে তার শরীর দেখে কুরুচির হাঁসি হেসেছিল সেদিনই তো সে বুঝেছিল এই হাঁসি ভালবাসার হাঁসি না এটা নোংরামির হাঁসি। নিরিবিলি কাছে পেলে ফারুক মাস্টের তাকে যে শকুনের মতো করে কামড়ে কামড়ে খাবে রেনু সেটা জানতো। এতো কিছু জানার পরেও কেন তাহলে একা বাসাতে সে ফারুক মাস্টের এর কাছে গেলো? একটাই উত্তর বার বার রেনুর মাথাতে আসছে, সেটা হল ভালবাসা। সে আসলেই ফারুক মাস্টের কে ভালবেসে ফেলেছিল। রেনু জানত ফারুক মাস্টের একটা লম্পট তার পরেও সে তাকে ভালবাসত। রেনু জানত একা বাসায় গেলে সে তাকে ভোগ করবে তবুও তার বাসায় গিয়েছিল কেননা শত বিপদ জানার পরেও ভালবাসার মানুষ কে কখনো না করা যায় না। মনে হয় একটা সুযোগ দিয়েই দেখি। যুগ যুগ ধরে মেয়েরা লম্পট দের সুযোগ করে দিচ্ছে। এভাবে সুযোগ দিতে দিতে মেয়েদের একদিন শেষ পরিনতি হয় আত্মহর্তা না হয় গন ধর্ষণের শিকার হয়ে অকাল মৃত্যু।মেয়েরাই পৃথিবীতে ভালবাসাকে এখনো টিকিয়ে রেখেছে। একটা মেয়ে এখনো দুনিয়াতে আসেনাই যে তার ভালবাসার মানুষকে এভাবে নির্যাতন করে মেরে ফেলতে পারে। জয় হো নারী জাতি।

রেনুর অকাল মৃত্যু হয়েছে। পেত্নী হয়ে এখন গাছে গাছে ঝুলছে তবুও কি মমতায় নিজ গর্ভে ফারুক মাস্টের এর সন্তানকে একদিন একদিন করে নয় মাস ধরে বড় করে তুলেছে। যার জন্য রেনু পেত্নীর এই করুন পরিনতি কি আশ্চায সে এখনো এই লম্পট মাস্টের কে ভালবাসে।ভালবাসে বলেই নিজ গর্ভে তার সন্তান জেনে আনন্দিত হয়।তাকে দেখে মনে হয় মা হতে পারাটাই অনেক গর্ভের হোক সে তা তার ভালবাসার মানুষ একটা লম্পট, লম্পট কে ভালবাসা যাবে না এমন কোন কথা নেই। মেয়েদের ভালবাসা বড়ই আজব, যে পায় নাই সে আসলে কিছুই পায় নাই পৃথিবীতে।

কয়লা ধুইলে ময়লা যায় না। এতো কিছুর পরেও ফারুক মাস্টের এর কোন পরিবর্তন হয় নাই। লম্পট যতই ধার্মিক হোক না কেন তার স্বভাব যাবে না। গত নয় মাসে লম্পট ফারুক মাস্টের আবারো এক ছাত্রীর সাথে লম্পাট্য করতে যেয়ে এলাকার মানুষের হাঁতে গন ধোলাই খেয়ে স্কুল থেকে চাকরি হারিয়েছে, এখন জেলের ভাত খাচ্ছে। তার স্ত্রী ফারুক মাস্টের কে তালাক দিয়ে দুই সন্তান নিয়ে বাপের বাড়ি উঠেছে। শোনা যাচ্ছে আবার নাকি অন্য কোথাও তার বিয়ের কথা হচ্ছে। রেনু পেত্নী খুব করে চাচ্ছে ফারুক মাস্টের এর স্ত্রীর বিয়ে হয়ে যাক, তাহলে তার পথটা পরিস্কার হয়ে যাবে।

আর সময় নিবে না, রেনু পেত্নীর এখনই প্রসব হয়ে যাবে। তীব্র ব্যাথায় সে সিংহীর মতো চিৎকার করছে। এটাই তার প্রথম মা হওয়া। রেনু কিছুতেই মানতে পারছে না যে যার সন্তান প্রসব করবে সে তার কাছে থাকবে না। একজন খুব কাছের প্রতিবেশি নাম কুসুম পেত্নী, তাকে কাছে ডেকে, হাঁতে ধরে মিনতির স্বরে কি যেন ফিসফিস করে বলছে রেনু। কথা শেষে কুসুম পেত্নী কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকল তারপর ব্যস্ত হয়ে গেলো। কুসুম আরও কয় জন কে কানে কানে কি সব কথা ফিস ফিসিয়ে বলল। সবাই মিলে রেনু কে উচু করে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কোথায়? এই অবস্থায় কোথায় নিয়ে যাচ্ছে ওরা রেনু কে? প্রচণ্ড ব্যাথার মধ্যেও রেনু পেত্নীর মনে কি বাসনা? বাকি পেত্নীরা তাকিয়ে তাকিয়ে কেবল দেখল।

ঠিক দুই ঘণ্টা পরের ঘটনা। তখন ফজর ওয়াক্ত হবে হবে। জেলের কয়েদিরা তখনো ঘুম থেকে ওঠে নাই। কয়েদি ফারুক মাস্টার কি যেন দুঃস্বপ্ন দেখে ঘুম থেকে উঠে বসেছে। জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে সে।অনেক দিন পরে আজ তার রেনুর কথা মনে পড়ছে। মনে মনে অনুশোচনা হচ্ছে আজ তার জন্য। মেয়েটা আমাকে ভালবাসত। এমনটা করা আমার ঠিক হয় নাই। যদি সে মরে না যেত ওকে বিয়ে করে স্ত্রীর মর্যাদা দিতাম। জোরে নিঃশ্বাস নিল ফারুক মাস্টার। যেন শরীরের সব পাপ বাতাসের সাথে বের হয়ে গেলো। রেনু ক তার স্ত্রী ভাবতে ভাল লাগছে এখন। ঠিক সেই সময়ে কয়েদখানার পাশের গুদাম ঘরে যেখান থেকে মাথা উচু করে ফারুক কে দেখা যায় সেখানে অন্ধকার প্রকোস্টে রেনু বাচ্চা প্রসব করলো। ফুটফুটে একটা বাচ্চা। চিৎকার করে কেঁদে উঠল বাচ্চাটা। ফারুক লাফিয়ে উঠে দাঁড়াল।যেন অনুভব করলো, সে ঘরের বাহিরে দাড়িয়ে আর ঘরের মধ্যে তারই স্ত্রী সন্তান প্রসব করলো, এই কান্না সেই কান্না। পরেক্ষনে আবার বসে পড়লো মেঝেতে। ধুর কি সব ভাবছি? রেনু পেত্নী তাকিয়ে তাকিয়ে পুরা ব্যাপার টা দেখল, মিষ্টি একটা হাঁসি দিয়ে তাকাল ফারুকের দিকে তারপর তাকাল সদ্যজাত বাচ্চাটার দিকে। এই সময়ে জেল খানার মসজিদ থেকে আজানের ধ্বনি ভেসে আসল। মনে হল যেন কোন বাবা তার সন্তানের জন্মে খুশি হয়ে আজান দিচ্ছে।
যৌবতী পেত্নীর মন ( 2য় পর্ব ) Bangla Golpo যৌবতী পেত্নীর মন ( 2য় পর্ব ) Bangla Golpo Reviewed by Unknown on September 27, 2018 Rating: 5

No comments:

Powered by Blogger.